সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৫ পূর্বাহ্ন
আমার সুরমা ডটকম ডেস্ক:
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, ধনী ও প্রভাবশালীদের গোপন অর্থ লেনদেনের তথ্য ফাঁস হয়েছে। করস্বর্গ হিসেবে পরিচিত পানামা, দুবাই, মোনাকো, সুইজারল্যান্ড ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসের মতো দেশ ও অঞ্চলের কোম্পানিতে বিভিন্ন দেশের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা যে অর্থ রেখেছেন ও গোপন লেনদেন করেছেন, সেই তথ্য ফাঁস হয়েছে। এই তালিকায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ, চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রে বাবিসের মতো নেতাদের নাম এসেছে।
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, ধনী ও প্রভাবশালীদের গোপন অর্থ লেনদেনের তথ্য ফাঁস হয়েছে। করস্বর্গ হিসেবে পরিচিত পানামা, দুবাই, মোনাকো, সুইজারল্যান্ড ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসের মতো দেশ ও অঞ্চলের কোম্পানিতে বিভিন্ন দেশের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা যে অর্থ রেখেছেন ও গোপন লেনদেন করেছেন, সেই তথ্য ফাঁস হয়েছে। এই তালিকায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন, যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার, আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ, চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রে বাবিসের মতো নেতাদের নাম এসেছে।
ব্রিটিশ দৈনিক ‘গার্ডিয়ান’, বিবিসিসহ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ওই সব কোম্পানির ১ কোটি ১৯ লাখ নথি বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে। এর নাম দেওয়া হয়েছে প্যান্ডোরা পেপারস।
বিবিসি বলছে, অফশোর কোম্পানিগুলোতে বিনিয়োগকারী হিসেবে যাদের নাম পাওয়া গেছে, তাদের মধ্যে বিভিন্ন দেশের সাবেক ও বর্তমান ৩৫ জন নেতা এবং ৩০০এর বেশি সরকারি কর্মকর্তা রয়েছেন। ৯০টির বেশি দেশের এসব কর্মকর্তার মধ্যে মন্ত্রী, বিচারক, মেয়র ও সেনাবাহিনীর জেনারেলরা রয়েছেন। আরও আছেন শতাধিক বিলিওনিয়ার, বিভিন্ন ক্ষেত্রের জনপ্রিয় ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীরা।
এতে দেখা গেছে, জর্ডানের বাদশাহ গোপনে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে ১০ কোটি ডলারের সম্পদ করেছেন। যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার ও তাঁর স্ত্রী লন্ডনে একটি অফিস কেনার সময় ৩ লাখ ১২ হাজার পাউন্ড কর ফাঁকি দিয়েছেন।
ফাঁস হওয়া নথিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের মোনাকোয় গোপন সম্পদ এবং চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী আন্দ্রে বাবিসের ফ্রান্সে ২ কোটি ২০ লাখ ডলার দিয়ে প্রাসাদ কেনার তথ্য বেরিয়ে এসেছে। দেশটিতে চলতি সপ্তাহের শেষে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি।
ফিনসেন ফাইলস, প্যারাডাইস পেপারস, পানামা পেপারস ও লুক্সলিকস নামে সাত বছর ধরে বিভিন্ন দেশের প্রভাবশালী ও সম্পদশালী ব্যক্তিদের অন্য দেশে বেনামে বিনিয়োগের তথ্য ফাঁসের যে ধারাবাহিকতা চলে আসছে, সেখানে সর্বশেষ এলো প্যান্ডোরা পেপারস। গার্ডিয়ান বলছে, ইতিহাসে এবারই সবচেয়ে বেশি তথ্য ফাঁস হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের জোট ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসের (আইসিআইজে) উদ্যোগে ৬৫০ জনের বেশি সাংবাদিক এসব নথি বিশ্লেষণ করেন।
বিবিসি বলছে, এসব নথিতে যাঁদের নাম এসেছে, তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অর্থ পাচার ও কর ফাঁকির অভিযোগ রয়েছে। তবে এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি প্রকাশিত হয়েছে, তা হলো খ্যাতিমান ও সম্পদশালী ব্যক্তিরা কীভাবে যুক্তরাজ্যে গোপনে সম্পদ কিনতে আইনি পথেই বিভিন্ন কোম্পানি গঠন করেছেন। এসব কেনাকাটার পেছনে থাকা প্রায় ৯৫ হাজার অফশোর কোম্পানির মালিকদের নাম এসেছে।
আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ ও তাঁর পরিবার তাঁদের একজন। এই পরিবারের বিরুদ্ধে নিজ দেশের অর্থ লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আলিয়েভ পরিবার ও তাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা যুক্তরাজ্যে গোপনে ৫০ কোটির বেশি ডলারের সম্পদ কেনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। এই পরিবার লন্ডনে তাদের একটি সম্পত্তি ব্রিটিশ রাজপরিবারের কাছে বিক্রি করেছে। তাতে তাদের চার কোটি ডলারের বেশি অর্থ লাভ হয়েছে।
স্ত্রীসহ শচীন টেন্ডুলকর, ইমরানের মন্ত্রীদের সম্পদ বিদেশে:
সদ্য ফাঁস হওয়া প্যান্ডোরা পেপারসে ৭০০ জনের বেশি পাকিস্তানির নাম এসেছে। তাঁদের মধ্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মন্ত্রিসভার সদস্যসহ ঘনিষ্ঠ বৃত্তের লোকজন রয়েছেন। গতকাল সোমবার পাকিস্তানের দ্য ডন পত্রিকার অনলাইনের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ফাঁস হওয়া নথি থেকে জানা যায়, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরানের ঘনিষ্ঠ বৃত্তের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা গোপনে অফশোর কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন। তাঁদের মধ্যে মন্ত্রিসভার সদস্য, তাঁদের পরিবারের সদস্য ও প্রধান আর্থিক পৃষ্ঠপোষকেরা আছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নতুন পাকিস্তানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর ঘনিষ্ঠ বৃত্তের সদস্যরা গোপনে লাখ লাখ ডলার অফশোর কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন।
প্যান্ডোরা পেপারসে পাকিস্তানের যেসব ব্যক্তির নাম এসেছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দেশটির অর্থমন্ত্রী শওকত তারিন ও তাঁর পরিবারের সদস্যা, সিনেটর ফয়সাল ওয়াদা, পিএমএল-কিউ নেতা চৌধুরী মনিস এলাহি, পিপিপির শারজিল মেমন, শিল্প ও উৎপাদনমন্ত্রী খোশরো বখতিয়ারের পরিবার, পিটিআই নেতা আবদুল আলিম খান প্রমুখ।
পাকিস্তানের সামরিক নেতাদের নামও প্যান্ডোরা পেপারসে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইমরান খান নিজে কোনো অফশোর কোম্পানির মালিক, এমন ইঙ্গিত নথিতে নেই। পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী শওকত তারিন ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা চারটি অফশোর কোম্পানির মালিক বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। ইমরান খানের সাবেক অর্থ ও রাজস্ববিষয়ক উপদেষ্টা ওয়াকার মাসুদ খানের ছেলের নামও নথিতে আছে। পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন পিটিআই দলের শীর্ষস্থানীয় দাতা আরিফ নকভির নাম প্যান্ডোরা পেপারসে রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রেও প্রতারণার অভিযোগ আছে।
এদিকে টেন্ডুলকার ২০১৩ সালে ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর এক সময় ভারতের রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন। রাজ্যসভা হচ্ছে ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ। প্যান্ডোরা পেপারসে কেবল তাঁর নামই নয়, তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামও এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, টেন্ডুলকারের পরিবার ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডে একটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছিল। ২০১৬ সালে সেই বিনিয়োগের টাকা তুলে নেওয়া হয়।
স্ত্রী অঞ্জলি টেন্ডুলকার ও শ্বশুর আনন্দ মেহতার নামও আছে এতে। প্যান্ডোরা পেপারসের তথ্যানুযায়ী ২০১৬ সালে সেই প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ নগদীকরণের সময় শচীন টেন্ডুলকারের শেয়ার ছিল ৯, অঞ্জলির ১৪ ও আনন্দ মেহতার ৫টি। টেন্ডুলকারের শেয়ারের মূল্য ৮ লাখ ৫৬ হাজার ৭০২, অঞ্জলির ১৩ লাখ ৭৫ হাজার ৭১৪ ও শ্বশুরের শেয়ারের মূল্য ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৮২ মার্কিন ডলার।
ফাঁস হওয়া তথ্য নিয়ে যা বলছেন বিশ্বনেতারা:
প্যান্ডোরা পেপারসে নাম আসা চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী আন্দরেজ বাবিস নিজের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, কোনো ‘অবৈধ’ কাজের সঙ্গে তাঁর সংশ্লিষ্টতা নেই। দেশটিতে আসন্ন নির্বাচনে প্রভাব সৃষ্টি করতেই এসব সামনে আনা হচ্ছে বলে অভিযোগ এনেছেন তিনি। ফাঁস হওয়া নথি অনুযায়ী, চেক প্রধানমন্ত্রী ২০০৯ সালে অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে ফ্রান্সে ২ কোটি ২০ লাখ পাউন্ড খরচা করে একটি বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছিলেন। বাড়ি কেনার সময় আন্দরেজ বাবিসের নাম গোপন করেছিল ওই কোম্পানিগুলো।
প্যান্ডোরা পেপারসে নাম আসা চিলির প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ান পিয়েরাও নিজের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে তাঁর কার্যালয় থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে।